Bengali . বাংলা
পাখির বাসায় ডিজাইন থিংকিং
Mar 12, 2025
Back to blogs
আমার বাড়ির বারান্দা বেশ নিরিবিলি, দিনের বেশিরভাগ সময় ঘরের ভেতরে থাকায় বারান্দায় খুব কম যাতায়াত। বিগত কয়েকবছর ধরে নানা পাখির আসা-যাওয়া, একটা জিনিস লক্ষ্য করেছি—কাঁচ জিনিসটা পাখিদের বেশ পছন্দের। দিনে কতবার যে জানালার কাঁচে ঠোকর দেয় তার ঠিক নেই! ওদের কৌতুহলের যেন শেষ নেই। এই নিয়মিত আসা-যাওয়ায় ওরাও লক্ষ্য করেছে আমার বাড়ির বারান্দা নিরিবিলি ও নিরাপদ।
প্রথমে একটা সুন্দর ছোট্ট সানবার্ড। সে বিগত ৩-৪ বছর ধরে নিয়মিত আসে, বাসা বানায় বারান্দায়। কী সুনিপুণ তাদের বাসা! ওরা একদম ছোট ছোট কুঁটি সংগ্রহ করে, ঘন বুননে মজবুত বাসা বানায়। দেখে মনে হয়, বেশ শ্রমসাধ্য কাজ, মনে হয় যেন আর্কিটেকচার বা ডিজাইনের এক নিখুঁত উদাহরণ—যেখানে স্থায়িত্ব, নিরাপত্তা আর সূক্ষ্ম কারিগরি মিলেমিশে আছে। এ যেন সেই high-fidelity design, যেখানে প্রতিটি উপাদান তার নির্দিষ্ট প্রয়োজনে নিখুঁতভাবে বসানো হয়।
ইদানিং ঘুঘু পাখির আনাগোনা বেড়েছে। প্রথমে একজোড়া ঘুঘু এসে বাসা করল, ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা দিয়ে কোথায় হারিয়ে গেলো। বেশ কিছুদিন পর আবার দেখি আরেকজোড়া হাজির! এবার ওদের বাসাটা ভালো করে লক্ষ্য করলাম—খুবই সাধারণ, মিনিমাল দৃষ্টিভঙ্গিতে তৈরি। অল্প কিছু খড়কুঁটি জোগাড় করে, বেশ ফাঁকা ফাঁকা একটা বাসা বানিয়েছে। প্রথমে দেখে মনে হয়েছিল, যাচ্ছেতাই করে বানানো, কিন্তু পরে বুঝলাম, ওদের উদ্দেশ্যই আলাদা। ওরা সানবার্ডের মতো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় যায় না—শুধু একটা নিরাপদ জায়গা খুঁজে নেয়, ডিম পাড়ে, বাচ্চা একটু বড় হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে, ব্যস! আসলে এটা “Minimalist Design” বা Lean Thinking-এর মতো—যেখানে কম উপাদানে কার্যকর সমাধান খুঁজে নেওয়া হয়। ওদের জন্য “অতিরিক্ত” কিছু দরকার নেই, যা প্রয়োজন তাই যথেষ্ট।
এবার ভাবলাম, ডিজাইন তো পাখিদের জীবনেও কতভাবে মিশে আছে! সানবার্ডের বাসা যদি হয় intricate craftsmanship, তবে ঘুঘুর বাসা একদম essential design। আসলে, problem-solving mindset-এর দুটি দৃষ্টিভঙ্গি এখানে স্পষ্ট—
১. High-Detail Design (সানবার্ড) – যেখানে সূক্ষ্মতা ও স্থায়িত্ব প্রধান
২. Minimal & Sustainable Design (ঘুঘু) – যেখানে শুধু প্রয়োজনীয় জিনিস ব্যবহার করে সহজ সমাধান খোঁজা হয়
আরেকটা বিষয় লক্ষ্য করলাম—ঘুঘুদের কোনো জটিল পরিকল্পনা নেই, তাদের মূল এজেন্ডা সহজ: সুরক্ষিত জায়গা খুঁজে ডিম পাড়া, আর বাচ্চা বড় হলেই উড়ে যাওয়া। এটা অনেকটা modular design thinking-এর মতো, যেখানে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় অংশ রাখা হয়। আজকের sustainable architecture ধারণার সাথেও মিলে যায়!
বহুল প্রচলিত একটা কথা “ঘুঘু দেখেছো, ফাঁদ দেখোনি”—এর আসল ব্যাখ্যা কী সেটা না জানলেও আমার মতো করে ভাবতে পারি যেমন, ঘুঘুরা মানুষকে তেমন একটা ভয় পায় না, ওদের খুব নিকটে না পৌঁছালে ওরা ডানা মেলে না। তাই হয়তো এ কথাটার প্রচলন।এই যে ওরা আমাদের কম ভঁয় পায়, এর অর্থ দুরকম হতে পারে, হয় ওরা চতুর নয়, নতুবা ওরা আমাদের বিহেভিয়ার প্যাটার্ন বোঝে মানে আমরা কখন আক্রমণ করবো না করবো সেটা নিয়ে ওরা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী, এখন কি মনে হয় ওরা বোকা না চতুর? অনেকসময় নিজের সৃজনশীল দক্ষতা নিয়ে এমনই আত্মবিশ্বাস প্রয়োজন।
প্রকৃতি আসলে সবসময় শেখায়। আমাদের ডিজাইন থিংকিং-এর অনেক মূলনীতিই তো এখান থেকেই আসে—Adaptability, Resource Efficiency, Sustainable Living। হয়তো, আমরা যদি ডিজাইনে সত্যিকারের কার্যকারিতা খুঁজি, তাহলে এই ঘুঘু আর সানবার্ডের মতোই প্রকৃতি থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারি!

written by
Zahid Ansari